পাহাড়ি ঝর্না নাফাখুম
ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:
দেশের অন্যতম একটি পর্যটন স্পট বান্দরবন। যেখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে। মেঘের সংস্পর্শ, সাথে হিম বাতাসের খেলা। আর চারপাশে সবুজের হাতছানি। চারদিকে শুধুই বিশুদ্ধ শান্তির পরশ।
পার্বত্য জেলা বান্দরবনের রেমাক্রি। এটি একটি মারমা অধ্যুষিত এলাকা। বান্দরবান জেলার যে স্থানগুলোর কারণে এই জেলাটি পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকা জেলাগুলোর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে তার একটি হচ্ছে ‘নাফাখুম ঝর্না’। আর এই রেমাক্রি গ্রামটিকে কেন্দ্র করেই এই নাফাখুম ঝর্নাটি অবস্থিত।
রেমাক্রি থেকে প্রায় ৩ ঘন্টার হাটা দূরত্বে এই ঝর্নাটি অবস্থিত। রেমাক্রি খালের পানি প্রবাহ এই স্থানে এসে বাক খেয়ে প্রায় ৩০ ফুট নিচে পতিত হয়ে প্রকৃতির অপরূপ ছোঁয়ায় সৃষ্টি হয়ে অসাধারণ এই ঝর্নাটি।
ওপরে খোলা আকাশে রৌদ্র-মেঘের লুকোচুরি আর নিচে খরস্রোতা নদীর ধেয়ে আসা ছল ছল শব্দ। সব মিলিয়ে এ যেনো স্রষ্টার এক অপরূপ সৃষ্টি। চারিদিকে পাহাড়-পর্বত, নদী ও পাথরের খাল দেখে যে কারো মনে হতে পারে যেনো শিল্পীর আঁকা কোনো ছবি চোখের সামনে ভাসছে।
বর্ষাকালে ঝর্না দিয়ে তীব্র গতীতে পানি নিচের দিকে পতিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে তীব্রতা কমে যায় ও ঝরনার আকার ছোট হয়ে আসে। তবে যারা নাফাখুম ঝর্নার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে চান তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যে ভ্রমণ করলে তা দেখতে পারবেন। এই সময় উপর থেকে আছড়ে পড়া পানির প্রচন্ড আঘাতে ঝর্নার চারপাশে অনেকটা স্থান জুড়ে সৃষ্টি হয় ঘন কুয়াশার সেই সাথে উপর থেকে নিচে পানি পতিত হওয়ার আওয়াজ তো রয়েছেই। বাতাসের সাথে উড়ে যাওয়া পানির বিন্দু পর্যটকদের দেহ মন সব আনন্দে ভিজিয়ে দেয়। যা কিনা মুহুর্তের মধ্যে যে কারো মন ভালো করতে সক্ষম।
এই স্থানের কিছু কিছু পাহাড় বেশ উঁচু। দেখে মনে হবে সেই পাহাড়গুলোর চূড়া মেঘের আবরণে ঢাকা পড়েছে। পাহাড়ের ঢালের মাঝে রয়েছে টিনের ঘরবাড়ি। এখানকার নদীগুলোর গভীরতা খুব কম। কোনো কোনো স্থানে পানির নিচের মাটি দেখা যায়। তবে নদীগুলোতে সবসময় প্রচন্ড স্রোত থাকে। তাই পথ চলতে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
বান্দরবান থেকে নাফাখুম যাওয়ার পথে পর্যটকদের তিন্দু ও বড় পাথর নামক দুটি স্থান পাড়ি দিতে হয়। অসাধারণ সুন্দর এই তিন্দুতে একটি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। তিন্দুতে পর্যটকদের জন্য রাতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে।
তিন্দু থেকে কিছুটা পথ সামনে এগোলেই বড় পাথর। স্থানীয়দের বিশ্বাস চলতি পথে এই পাথরকে সম্মান প্রদর্শন করতে হয় নতুবা যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয় লোকজন এই পাথরকে রাজা পাথর বলে সম্বোধন করেন।
বড় পাথর থেকে ঘন্টা খানেকের পথ পাড়ি দিলেই রেমাক্রী বাজারের দেখা মিলবে। তিন্দু ও বড় পাথর স্থানদুটো পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতা নাফাখুম ঝর্না দেখার সবচাইতে বড় আনন্দ।
সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিবারের আপনজন, বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন। যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে প্রকৃতির এমন বিশুদ্ধ পরশ জীবনে এনে দেবে ভিন্নমাত্রা।